আজ ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

সনেটের মহাকবির স্মরণে ‘মধুমেলা’ আজ থেকে শুরু


অনলাইন ডেস্কঃ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে আজ শনিবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে নয়দিনব্যাপী ‘মধুমেলা’।

এ উপলক্ষ্যে কপোতাক্ষ নদ পাড়ের সাগরদাঁড়িকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। মধুমেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজক কমিটি আশা করছে হাজারো মধুভক্তের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে মেলা প্রাঙ্গণ। মেলাকে কেন্দ্র করে কবির জন্মভূমির স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদ পাড়, মধুপল্লীসহ মেলা প্রাঙ্গণে ইতোমধ্যেই আসতে শুরু করেছে দর্শনার্থীরা। মধুমেলায় গ্রামীণ কুটিরশিল্পপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের শত শত ষ্টল বসেছে। এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন প্যান্ডেলসহ শিশু বিনোদনের সরঞ্জাম প্রস্তুত করা হয়েছে। মেলায় স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজাচ্ছেন। দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য মধুমঞ্চে নয় দিনব্যাপী আলোচনা সভা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্যান্ডেলে সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী ও মৃতুকূপ খেলার পাশাপাশি বিভিন্ন আকর্ষণীয় খেলাধুলা থাকছে। শিশুদের জন্য রয়েছে নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আয়োজন। যশোর শহরসহ কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মধুমেলার ফেস্টুন টাঙানোসহ প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।

সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত বলেন, ‘মধুমেলা উপভোগ করার জন্য ইতোমধ্যে সাগরদাঁড়ি এলাকাসহ আশপাশের গ্রামে আত্মীয়-স্বজন আসতে শুরু করেছেন।মেলা উপলক্ষে অনেকেই মেয়ে-জামাই, বন্ধু-বান্ধবসহ আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দিয়েছেন।প্রতি বাড়িতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। অন্যবারের তুলনায় এবারের মেলায় অনেক বেশি দর্শনার্থী ও মধুপ্রেমীদের সমাগম ঘটবে।’

মধুসূদন একাডেমির পরিচালক কবি ও মধুসূদন গবেষক খসরু পারভেজ বলেন, ‘অন্য বছরের থেকে এবার মেলা দুইদিন বাড়িয়ে নয়দিন করা হয়েছে। এতে আলোচকদের মাধ্যমে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত সম্পর্কে দর্শনার্থীরা আরও বেশি জানার সুযোগ পাবেন।’

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ তুহিন হোসেন বলেন, ‘সাগরদাঁড়িতে নয়দিনব্যাপী মধুমেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মধুমঞ্চের আলোচনা সভা ও সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা অংশ নেবেন। এবারও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকেল মধুসূদন পদক প্রদান করা হবে।মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসনও ব্যাপক তৎপর থাকবে।’

আরও পড়ুন কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস

যশোরের জেলা প্রশাসক ও মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘অশ্লীলতা মুক্ত মধুমেলা অনুষ্ঠিত হবে। দর্শনার্থীদের মধুমেলা উপভোগ করতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, মহাকবি মাইকেল মদুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের পাড়ে সাগরদাঁড়ি গ্রামে বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক ছিলেন তিনি। বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যেও অসামান্য অবদান রাখায় বিশ্ববাসী এই ধীমান কবিকে মনে রেখেছে কৃতজ্ঞচিত্তে। মদুসূদন দত্তের কালজয়ী রচনাবলীর অন্যতম হলো মেঘনাদবধ কাব্য, দ্য ক্যাপটিভ লেডী, শর্মিষ্ঠা, ক্যাপটিভ লেডী, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, কৃষ্ণকুমারী, বুড়ো শালিকের ঘাঁড়ে রোঁ, পদ্মাবতী, ব্রজঙ্গনা কাব্য, বীরাঙ্গণা কাব্য, হেক্টরবধ, চতুর্দশপদী কবিতাবলী। এ মহাকবির জন্মের কারনেই যশোরের সাগরদাঁড়ি ও কপোতাক্ষ নদ জগৎবিখ্যাত। কালের প্রবাহে কপোতাক্ষ নদের যৌবন বিলীন হলেও মাইকেলের কবিতার কপোতাক্ষ নদ যুগে যুগে বয়ে চলেছে। ১৮৭৩ সালে ২৯ জুন কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এ মহাকবি। কলকাতায় তাকে সমাধিত করা হয়।

তথ্যসূত্র: বাসস


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর